বিশেষ প্রতিবেদক:
বিগত দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে হোপ ফাউন্ডেশনের হোপ হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল সেন্টারের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। মানবতার সেবায় অবদান রেখে এই প্রতিষ্ঠানটি এতদঞ্চলের মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। সেই সাথে হোপ ট্রেইনিং সেন্টারে মাধ্যমে ৫০ জন শিক্ষার্থী মিডওয়াইফারী শিক্ষা গ্রহণ করছে। কিন্তু হোপ ফাইন্ডেশন ও হোপ হসপিটালের মানব সেবামূলক কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই মানসেবী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। মহলটি নিজেরদের স্বার্থসিদ্ধি করতে না পারায় এই ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৮ মাস আগে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার সাথে সাথে হোপ ফাউন্ডেশনের কর্মরত কয়েকজন এবং বাইরের ২/৪ জন চিহ্নিত ব্যক্তি নতুন প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও আর্থিক স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। এই সব ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ নানাভাবে অবৈধ ও অনৈতিক আর্থিক ও প্রশাসনিক সুবিধা গ্রহণ করেছে।

হোপ ফাউন্ডেশনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রকল্পে সেবা গ্রহনকারী মায়েরা হোপ মেটার্নিটি সেন্টার থেকে সেবা নিচ্ছে। মেটার্নিটি সেন্টারের সেবা প্রদানকারী জানান ১ এপ্রিল থেকে নিরাপদ মাতৃত্ব প্রকল্প-৩ চালু হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৫০০ জন মা বিনামুল্যে/স্বল্প মুল্যে প্রসূতিকালীন সকল সেবা, পরীক্ষা ও ঔষধ পাবেন এবং প্রথম ২০০ জন মা ফ্রি ডেলিভারীর সুযোগ পাবেন।

সেবf গ্রহনকারী একজন মা জানান, বাইরে কোন হাসপাতালে এই সেবার মুল্য প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকা। হাসপাতালের ওয়ার্ডে জরায়ু নেমে আসা (প্রলাপস) রোগের চিকিৎসা নিয়েছে এমন একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা জানান তিনি দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবৎ এই রোগে ভুগছেন। হোপ হাসপাতালে তার ফ্রি চিকিৎসা হয়েছে। অর্থ অভাবের কারনে এতদিন এই চিকিৎসা করতে পারেনি।

নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় তাদের অবৈধ অর্থ উপার্জন, অবৈধ আধিপত্য বন্ধ হওয়ায় এবং সকলকে জাবাবদিহিতার আওতায় আনার কারনে তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে বিভিন্নভাবে হোপ ফাউন্ডেশনের প্রশাসন ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘৃন্য অপপ্রচারে লিপ্ত হয় বলে মনে করেন কর্তৃপক্ষ।
হোপ ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কতিপয় কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমান প্রশাসনের উপর সকলে অত্যন্ত খুশী। কারন তাদের সুযোগ সুবিধা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। গত বছর যেখানে বাৎসরিক ইনকিমেন্ট হয়েছিল গড়পরতা ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এবছর সেই ইনক্রিমেন্ট হয়েছে সর্বনি¤œ ৩৫০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত। এছাড়া ইনচার্জ ভাতা, পবিত্র রমজান মাসে ফ্রি ইফতার ও ফ্রি সেহেরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে অনেক নীতিমালা ছিল না বা অসম্পুর্ন ছিল। এখন প্রায় সব বিষয়ে নীতিমালা তৈরী করা হয়েছে। হোপ হসপিটালে বিগত ৬/৭ মাসে নতুন আলট্্রাসোনো মেশিন, ইসিজি মেশিন, ল্যাবে এনালাইজার মেশিন কেনা হয়েছে। ল্যাব এবং আলট্্রাসোনো রুমে এসি লাগানো হয়েছে। রোগী ও তাদের এটেনডেন্টের জন্য সর্বাধুনিক পানির ফ্লিটার বসানো হয়েছে।

হোপ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর রাকিবুল হক জানান, হোপ ফাউন্ডেশন প্রতি বছর ৩/৪টি মেডিক্যাল কাম্পের মাধ্যমে জন্মগত ঠোঁটকাটা, তালুকাটা রোগীদের সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা রোগীদের হোপ হসপিটালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
হোপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত হোপ হসপিটালে প্রতি বছর ২/৩টি ক্যাম্পের মাধ্যমে আগুনে পোড়া রোগীদের সম্পূর্ণ বিনা মুল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ রোগীকে চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা হয়েছে এবং তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
সূত্র মতে, প্রশাসনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে প্রত্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪টি বার্থ সেন্টার বা প্রসুতি কেন্দ্র স্থাপন। খুনিয়াপালং, ইসলামপুর, পোকখালী ও ভারয়াখালীতে ৪টি বাথ সেন্টার স্থাপন করে হোপ ফাউন্ডেশন গর্ভকালীন মাতৃত্বসেবা ঐ সব এলাকার দরিদ্র মানুষের দোড়গোড়ায় নিয়ে গেছে। শুধুমাত্র গর্ভকালীন সেবা নয় ঐ সব কেন্দ্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মিডওয়াইফ/প্যারামেডিক দ্বারা নরমাল ডেলিভারীও করানো হচ্ছে এবং বিগত ৬ মাসে এই সব সেন্টারে প্রায় ২০টি ডেলিভারী করানো হয়েছে।

হোপ ফাউন্ডেশন সাম্প্রতিক ঘুর্নিঝড় “মোরা” য় আহত এবং রোগাক্রান্ত প্রায় ৪০০ রোগীকে গত ৪ঠা এবং ৫ই জুন ১৭ বিশেষ মেডিক্যাল কাম্পের মাধ্যমে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঔষধ বিতরন করা হয়েছে। হোপফাউন্ডেশন সম্প্রতি ৪৮টিস্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার উচ্চ শ্রেনীর মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য “নারী ও মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক” একটি প্রশিক্ষন কার্যক্রম চালু করেছে। ইতিমধ্যে ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে এবং ক্রমাগত বাকী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও প্রশিক্ষন প্রদান করা হবে।
হোপ হাসপাতালের গাইনী ও সার্জারী চিকিৎসক চিন্ময় বিশ্বাস জানান, প্রসব জনিত ফিস্টুলা মহিলাদের অত্যন্ত জটিল একটি রোগ। সাধারনত বিলম্বিত প্রসব এবং এক নাগাড়ে ৩/৪দিন যাবৎ প্রসব বেদনা কিন্তু সন্তান ভুমিষ্ট না হবার কারনে এই ফিষ্টুলা রোগ দেখা দেয়। এর ফলে মায়েদের প্রসাবের রাস্তা দিয়ে অনবরত প্রস্্রাব ঝড়তে থাকে। ফিস্টুলা রোগীদের শরীর থেকে অনবরত দুর্গন্ধ ছড়ায়। স্বামী তাকে তালাক দেয়। বাবার সংসারেও সে সকলের করুনার পাত্র হয়ে জীবন যাপন করে। এই রোগের চিকিৎসা সবখানে হয় না। হলেও তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা খরচ লাগে। অথচ হোপ হসপিটালে সম্পুর্ন বিনা খরচে এমন কি ফ্রি থাকা, খাবার, যাতায়ত ও ফ্রি ঔষধ দিয়ে ফিস্টুলা রোগীর চিকিৎসা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩০৮ জন ফিস্টুলা রোগীকে ফিস্টুলা চিকিৎসায় বিদেশে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত সার্জন দ্বারা চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

হোপ ফাইন্ডেশনের কান্ট্রি ডাইরেক্টর এস.এম ফেরদৌসুজ্জামান পিএসপি বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌছে দেবার জন্য হোপ ফাউন্ডেশন প্রতি বছর দুর্গম এলাকায় ৪৮/৫০টি মেডিক্যাল কাম্পের আয়োজন করে। এই সব ক্যাম্পে দরিদ্র রোগীদের বিনা মুল্যে এবং অন্যান্যদের স্বল্পমুল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অদুর ভবিষ্যতে হোপ নার্সিং ইনষ্টিটিউট চালু হতে যাচ্ছে এবং এই লক্ষ্যে কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। নাসির্ং ইনষ্টিটিউট চালু হলে প্রতি বৎসর ৫০ জন ছাত্রী এখানে নাসির্ং ডিপ্লোমা প্রশিক্ষন পাবেন। পাশাপাশি ৭৫ শয্যা বিশিষ্ট হোপ মেটার্নিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টারের নির্মাণ কাজও শীঘ্রই পুর্নমাত্রায় শুরু হবে। আগামী ২বৎসরের মধ্যে এটির নির্মান কাজ শেষ হলে এটি হবে বাংলাদেশের মহিলাদের প্রসব জনিত ফিস্টুলা রোগ চিকিৎসায় নিবেদিত একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র।’